“Krishnakali” বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি সুন্দর এবং গীতিকবিতা। কবিতাটি ঠাকুরের “গীতাঞ্জলি” কবিতার সংকলনের অংশ, যা তাকে 1913 সালে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার জিতেছিল। “কৃষ্ণকলি” একটি প্রেমের কবিতা যা দুই প্রেমিকের মধ্যে উদীয়মান সম্পর্কের সৌন্দর্য এবং সূক্ষ্মতাকে চিত্রিত করে। কবিতার ভাষা সহজ কিন্তু উদ্দীপক, এবং এটি মানুষের আবেগের সূক্ষ্মতাগুলিকে ক্যাপচারে ঠাকুরের দক্ষতা প্রদর্শন করে। এর কালজয়ী থিম এবং গীতিময় সৌন্দর্যের সাথে, “কৃষ্ণকলি” বাংলা সাহিত্যে একটি প্রিয় এবং খ্যাতিমান কাজ হয়ে আছে।
Krishnakali (কৃষ্ণকলি)
Rabindranath Tagore (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি।
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে এস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।
পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে,
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।
এমনি করে কালো কাজল মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি ক’রে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি ক’রে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার ‘পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
——– সমাপ্ত ———